সুন্দর বাগান গড়ার জন্য চারা গাছ লাগানোর পদ্ধতি

চারা গাছ লাগানো একটি সহজ কাজ হলেও, সঠিক গাছ লাগানোর পদ্ধতি অনুসরণ করা খুবই জরুরী। এতে গাছের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেক বৃদ্ধি পায় এবং একটি সুন্দর পরিবেশ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।


Photo by Pema Gyamtsho on Unsplash

ধাপে ধাপে চারা গাছ লাগানোর পদ্ধতি

সঠিক সময় নির্বাচন: সাধারণত বর্ষাকাল চারা লাগানোর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এই সময়ে মাটি আর্দ্র থাকে এবং নতুন চারা সহজে বেড়ে উঠতে পারে।

স্থান নির্বাচন: চারা লাগানোর জন্য এমন একটি স্থান নির্বাচন করুন যেখানে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়বে এবং মাটি ভালোভাবে নিষ্কাশিত হবে।

গর্ত তৈরি: চারার আকার অনুযায়ী একটি গর্ত খনন করুন। গর্তের গভীরতা ও প্রস্থ চারার শিকড়ের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের দ্বিগুণ হওয়া উচিত।

গর্তে মাটি ও সার মিশ্রণ: গর্তের নিচের অংশে কিছু পরিমাণ পচা গোবর বা কম্পোস্ট মিশ্রিত মাটি দিন। এটি চারার বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগাবে।

চারা রোপণ: চারাটি সাবধানে গর্তে রাখুন। নিশ্চিত করুন যে চারার গোড়া মাটির সাথে সমান তলে আছে কিনা।

মাটি চাপা দেওয়া: গর্ত ভালো করে মাটি দিয়ে ভরাট করুন এবং হালকা করে চাপা দিন। এতে মাটির সাথে চারার শিকড় ভালোভাবে লেগে যাবে।

সেচ: চারা লাগানোর পর পরপরই ভালো করে পানি দিন।

ছায়া দেওয়া: প্রথম কয়েকদিনের জন্য চারাটিকে সরাসরি সূর্যের আলো থেকে রক্ষা করার জন্য ছায়া দিন।

চারা গাছের যত্ননিয়মিত সেচ: মাটি শুকিয়ে গেলেই চারাটিকে পানি দিন।

আগাছা পরিষ্কার: চারার চারপাশে জন্মানো আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করুন।

সার প্রয়োগ: নির্দিষ্ট সময় পর পর চারাটিকে সার দিন।

রোগবালাই প্রতিরোধ: রোগবালাই দেখা দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিন।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

চারা বাছাই: সবল ও সুস্থ চারা বাছাই করুন।

মৌসুম: প্রতিটি গাছের জন্য উপযুক্ত লাগানোর মৌসুম আছে।

মাটির ধরন: মাটির ধরন অনুযায়ী চারা বাছাই করুন।

জাত: স্থানীয় জাতের চারা লাগানো ভালো।

ফল চাষ করা প্রয়োজন কেন?

এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে এর সম্পর্কটা বুঝতে হবে। ফল শুধু মাত্র আমাদের স্বাদকলি পরিতৃপ্ত করার জন্য নয়, এটি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

Photo by Justus Menke on Unsplash


ফল চাষ করার গুরুত্ব:

পুষ্টির উৎস: ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ লবণ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার। এই উপাদানগুলো শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

সুস্থ জীবন: নিয়মিত ফল খাওয়ার মাধ্যমে আমরা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার এবং অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে পারি।

পরিবেশ সুরক্ষা: ফলের গাছ পরিবেশের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি বায়ু দূষণ কমাতে, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।

অর্থনৈতিক সুবিধা: ফল চাষ করে অনেকেই নিজের এবং পরিবারের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। এটি একটি স্থানীয় অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

খাদ্য নিরাপত্তা: নিজের বাড়িতে ফল চাষ করে আমরা নিজেদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি।


বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে:

জলবায়ু উপযোগী: বাংলাদেশের জলবায়ু বিভিন্ন ধরনের ফল চাষের জন্য উপযোগী।

বেকারত্ব হ্রাস: ফল চাষের মাধ্যমে বেকারত্ব হ্রাস করা সম্ভব।

রপ্তানি: অনেক ফল বিদেশে রপ্তানি করা যায়, যা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে।


ফল চাষ করা শুধু মাত্র একটি কৃষি কাজ নয়, এটি একটি সুস্থ জীবনযাত্রা নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। তাই আমাদের সকলকেই ফল চাষকে উৎসাহিত করতে হবে।

উন্নত জাতের ফলগাছের প্রপাগিউল (প্রজননের একক) সরবরাহ প্রবাহ

প্রপাগিউল শব্দটি ফলগাছের নতুন গাছ তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত যেকোনো অংশকে বোঝায়। এটি হতে পারে বীজ, ডাল, কলম, বা অন্য কোনো অংশ। উন্নত জাতের ফলগাছের প্রপাগিউলের সরবরাহ প্রবাহ একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা গবেষণা, উৎপাদন, বিতরণ এবং চূড়ান্ত কৃষকের হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত বিস্তৃত।

প্রপাগিউল সরবরাহ প্রবাহের ধাপসমূহ:

গবেষণা ও উন্নয়ন:

নতুন জাত উদ্ভাবন: বিভিন্ন কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন উন্নত জাতের ফলগাছ উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা করে।

জেনেটিক উন্নয়ন: জিনগত প্রকৌশলের মাধ্যমে ফলের গুণগত মান, ফলন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়।

মাতৃগাছ বা বাগান তৈরি:মাতৃগাছ নির্বাচন: উন্নত জাতের ফলগাছের সুস্থ ও শক্তিশালী মাতৃগাছ নির্বাচন করা হয়।

বাগান স্থাপন: মাতৃগাছগুলো একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে বাগানে রোপণ করা হয়।


প্রপাগিউল উৎপাদন:

বীজ সংগ্রহ: বীজের মাধ্যমে প্রজনন করার ক্ষেত্রে, মাতৃগাছ থেকে পরিপক্ক ফল সংগ্রহ করে বীজ নিষ্কাশন করা হয়।

কলম বা ডাল কাটা: কলম বা ডাল কেটে নতুন গাছ তৈরির জন্য বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

মূলদান তৈরি: কলম বা ডালগুলোকে মূলদানে রোপণ করে নতুন মূল গজানো হয়।


গুণগত মান নিশ্চিতকরণ:

পরীক্ষা: উৎপাদিত প্রপাগিউলগুলোর গুণগত মান যাচাই করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।

বিতরণ:বীজ সংস্থা: উৎপাদিত বীজগুলো বীজ সংস্থার মাধ্যমে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।

নার্সারি: কলম বা ডাল দিয়ে তৈরি করা ছোট গাছগুলো নার্সারিতে বিক্রয়ের জন্য রাখা হয়।

কৃষি মেলা: বিভিন্ন কৃষি মেলায় উন্নত জাতের ফলগাছের প্রপাগিউল বিক্রয় করা হয়।

স্থানীয় নার্সারি: স্থানীয় নার্সারিগুলোতেও উন্নত জাতের ফলগাছের চারা পাওয়া যায়।

প্রকৃতিক দুর্যোগ: বন্যা, খরা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রপাগিউল উৎপাদন ও বিতরণে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

বীজতলা:

বীজতলা হল ফসল চাষের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে বীজকে প্রথমে অঙ্কুরিত করা হয় এবং তারপর রোপণের জন্য ছোট চারা তৈরি করা হয়। বীজতলায় উৎপাদিত চারাগুলো সাধারণত আরো শক্তপোক্ত এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন হয়।

বীজতলার গুরুত্ব:বীজ অঙ্কুরণ: বীজগুলোকে একটি নিরাপদ পরিবেশে অঙ্কুরিত করার সুযোগ দেয়।

চারা গঠন: ছোট ছোট চারা তৈরি করে, যা পরবর্তীতে খেতে রোপণ করা হয়।

রোগবালাই দমন: বীজতলায় রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।

জমি ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধি: বীজতলায় চারা তৈরি করে জমির কার্যকর ব্যবহার করা যায়।

ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি: সুস্থ চারা রোপণের ফলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

বীজতলা মূলত দুই ধরনের হয়:

  1. স্থায়ী বীজতলা: এটি একটি নির্দিষ্ট জায়গায় স্থাপিত হয় এবং বারবার ব্যবহৃত হয়।
  2. অস্থায়ী বীজতলা: এটি প্রতি বছর নতুন করে তৈরি করা হয়।

বীজতলা তৈরির পদ্ধতি:

জমি প্রস্তুত: বীজতলার জমি ভালভাবে চাষ করে ঝুরঝুরে করে তুলতে হবে।

বীজ বপন: বীজগুলো নির্দিষ্ট দূরত্বে বপন করতে হবে।

সেচ: বীজতলায় নিয়মিত সেচ দিতে হবে।

আগাছা পরিষ্কার: বীজতলায় আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে।

রোগবালাই দমন: রোগবালাই দেখা দিলে উপযুক্ত কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

বীজতলার যত্ন: নিয়মিত পর্যবেক্ষণ: বীজতলা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা উচিত।

বীজতলা থেকে চারা উঠানো: চারা যখন যথেষ্ট বড় হয় তখন তা খেতে রোপণ করার জন্য উঠানো হয়।

বিভিন্ন ফসলের জন্য বীজতলা:

বিভিন্ন ফসলের জন্য বীজতলার আকার, গভীরতা এবং অন্যান্য বিষয় ভিন্ন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ধান, গম, শাকসবজি ইত্যাদির জন্য আলাদা আলাদা ধরনের বীজতলা তৈরি করা হয়।

বীজতলার সুবিধা:

  • ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি
  • জমির কার্যকর ব্যবহার
  • রোগবালাই দমন
  • উন্নত মানের ফসল উৎপাদন

বীজতলা একটি সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কৃষি পদ্ধতি। এটি ফসল চাষের সফলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


ফল জাতীয় গাছের বীজের তথ্যপঞ্জি:


ফল জাতীয় গাছের বীজ হল নতুন গাছ জন্মদানের মূল উৎস। বিভিন্ন ফলের গাছের বীজের আকার, রং, এবং অঙ্কুরণের সময় ভিন্ন ভিন্ন হয়।

কেন বীজের তথ্যপঞ্জি জানা জরুরি?

সঠিক চাষ: বিভিন্ন ফলের বীজের বিশেষ চাষ পদ্ধতি থাকে। এই তথ্য জানা থাকলে সঠিকভাবে চাষ করা যায়।
অঙ্কুরণের সময়: বিভিন্ন বীজের অঙ্কুরণের সময় ভিন্ন ভিন্ন হয়। এই তথ্য জানা থাকলে কখন বীজ বপন করতে হবে তা নির্ধারণ করা যায়।
মাটি ও আবহাওয়া: বিভিন্ন বীজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ধরনের মাটি ও আবহাওয়া প্রয়োজন। এই তথ্য জানা থাকলে সঠিক পরিবেশ তৈরি করা যায়।

বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ:

সময়: পরিপক্ক ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
পদ্ধতি: ফল কেটে বীজ বের করে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে রাখতে হবে।
সংরক্ষণ: শুকনো ও ঠান্ডা জায়গায় বীজ সংরক্ষণ করতে হবে।

বীজ বপন:

মাটি: ভালো জৈব সারযুক্ত মাটিতে বীজ বপন করতে হবে।
গভীরতা: বীজের আকার অনুযায়ী মাটির নিচে গভীর করে রোপণ করতে হবে।
পানি: নিয়মিত পানি দিতে হবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:বিভিন্ন জাতের ফলের বীজের অঙ্কুরণের সময় ও পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারে।

চারা গাছের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ

চারা গাছের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটি আপনাকে গাছের স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা দেয় এবং আপনি যথাযথ পরিচর্যা করার মাধ্যমে একটি সুস্থ গাছ বড় করতে পারবেন।

কেন চারা গাছের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করা জরুরি?

  • স্বাস্থ্য সমস্যা শনাক্ত করা: পাতার রং পরিবর্তন, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ, জলের অভাব ইত্যাদি সমস্যা প্রথমে চিনতে সাহায্য করে।
  • পরিচর্যা উন্নতি: গাছের প্রয়োজন অনুযায়ী সার, পানি এবং আলোর পরিমাণ সামঞ্জস্য করতে সাহায্য করে।
  • বৃদ্ধি হার নির্ধারণ: গাছ কত দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে তা জানতে সাহায্য করে।
  • সঠিক সময়ে রোপণ: গাছ যখন বড় হয়ে যায় তখন একে স্থানান্তর করার জন্য সঠিক সময় নির্ধারণ করে।
  • চারা গাছের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়পাতা: পাতার রং, আকার, এবং কোনো রোগ বা পোকার আক্রমণের লক্ষণ আছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করুন।
  • ডাল: ডালের বৃদ্ধি, শাখা প্রশাখা, এবং কোনো ক্ষতির লক্ষণ আছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করুন।
  • মূল: যদি গাছটি পাত্রে রোপণ করা হয়, তবে মাঝে মাঝে পাত্র থেকে বের করে মূলের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করুন।
  • মাটি: মাটি শুষ্ক না, আর্দ্রতা যথেষ্ট আছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করুন।
  • উচ্চতা: নিয়মিতভাবে গাছের উচ্চতা পরিমাপ করুন।

চারা গাছের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণের একটি সহজ পদ্ধতি-
একটি নোটবুকে গাছের নাম, রোপণের তারিখ, এবং প্রতি সপ্তাহে বা মাসে পর্যবেক্ষণের ফলাফল লিখে রাখুন। গাছের ছবি তুলে রাখুন। এটি আপনাকে গাছের বৃদ্ধি কীভাবে হচ্ছে তা দেখতে সাহায্য করবে। এবং গাছের উচ্চতা বা পাতার সংখ্যা সময়ের সাথে সাথে কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তা দেখার জন্য একটি গ্রাফ তৈরি করুন।

চারা গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণ

  • পানির অভাব: যদি মাটি শুষ্ক হয়, তবে গাছের পাতা মরে যেতে পারে।
  • অতিরিক্ত পানি: যদি মাটিতে পানি জমে থাকে, তবে মূল পচে যেতে পারে।
  • পোকা-মাকড়ের আক্রমণ: পোকা-মাকড় পাতা, ডাল এবং মূল ক্ষতি করতে পারে।
  • রোগ: বিভিন্ন ধরনের রোগ গাছকে আক্রমণ করতে পারে।
  • পুষ্টির অভাব: মাটিতে যদি যথেষ্ট পুষ্টি না থাকে, তবে গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
  • আলোর অভাব: সব গাছের জন্যই পর্যাপ্ত আলো প্রয়োজন।

সমাধান

  • পানি: মাটি সবসময় আর্দ্র রাখুন, কিন্তু পানি জমতে দিবেন না।
  • পোকা-মাকড়: যদি পোকা-মাকড়ের আক্রমণ লক্ষ্য করেন, তাহলে উপযুক্ত কীটনাশক ব্যবহার করুন।
  • রোগ: যদি গাছ রোগাক্রান্ত হয়, তাহলে আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলুন এবং উপযুক্ত কীটনাশক ব্যবহার করুন।
  • পুষ্টি: নিয়মিত সার প্রয়োগ করুন।আলো: গাছকে পর্যাপ্ত আলো দিন।

চারা গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়

সাধারণত বর্ষা মৌসুমই গাছ লাগানোর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এই সময় মাটি আর্দ্র থাকে, বৃষ্টি হয়, তাপমাত্রা অনুকূল থাকে। ফলে নতুন চারা সহজেই বেঁচে থাকতে পারে এবং দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

কেন বর্ষা মৌসুম উপযুক্ত?

  • পানির সরবরাহ: বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টি হয়, ফলে নতুন রোপণ করা চারাকে নিয়মিত পানি দেওয়ার প্রয়োজন কম পড়ে।
  • মাটির আর্দ্রতা: বর্ষায় মাটি আর্দ্র থাকে যা চারার শিকড়ের বৃদ্ধির জন্য অনুকূল।
  • তাপমাত্রা: বর্ষায় তাপমাত্রা তীব্র গরম না হওয়ায় চারা সহজে পুড়ে যায় না।

অন্যান্য মৌসুমে গাছ লাগানো:

  • শীতকাল: শীতকালেও কিছু ধরনের গাছ লাগানো যায়। তবে এই সময় মাটি শুষ্ক থাকতে পারে, তাই নিয়মিত পানি দেওয়ার প্রয়োজন হয়।
  • গ্রীষ্মকাল: গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা খুব বেশি থাকায় গাছ লাগানো খুব একটা ভালো নয়। তবে যদি লাগানো হয় তবে ছায়াযুক্ত জায়গায় এবং নিয়মিত পানি দিয়ে লাগাতে হবে।

কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি:

গাছের প্রজাতি: বিভিন্ন গাছের প্রজাতির জন্য রোপণের উপযুক্ত সময় ভিন্ন হতে পারে।
আবহাওয়া: আপনার এলাকার আবহাওয়া অনুযায়ী গাছ লাগানোর সময় নির্ধারণ করুন।
মাটির গুনাগুণ: মাটির ধরন অনুযায়ী গাছের প্রজাতি নির্বাচন করুন।


চারা কলম উৎপাদন

চারা কলম উৎপাদন হল উদ্ভিদ প্রজননের একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে একটি গাছের ডালকে অন্য একটি গাছের শাখায় জোড় করে নতুন একটি গাছ তৈরি করা হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে আপনি আপনার পছন্দের ফলের গাছ বা ফুলের গাছ নিজেই তৈরি করতে পারবেন।



কেন চারা কলম উৎপাদন করবেন?

কলম করা গাছ মূল গাছের সব ধরনের বৈশিষ্ট্য, যেমন ফলের স্বাদ, রং, আকার ইত্যাদি ধরে রাখে। বীজ থেকে উৎপন্ন গাছের তুলনায় কলম করা গাছ দ্রুত ফল দেয়। কলম করা গাছ সাধারণত রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হয়। একই গাছে বিভিন্ন জাতের ফল ধরানোর জন্য কলম করা হয়।

কলম করার পদ্ধতিকলম এবং মূলদান নির্বাচন:

  • কলম: যে গাছের ডাল থেকে কলম নেওয়া হবে তাকে কলম বলা হয়। কলম সুস্থ, শক্তিশালী এবং রোগমুক্ত হতে হবে।
  • মূলদান: যে গাছের শাখায় কলম জোড়া হবে তাকে মূলদান বলা হয়। মূলদান শক্তিশালী এবং সুস্থ হতে হবে।
  • কলম তৈরি: কলমটি তীক্ষ্ণ ছুরি দিয়ে তির্যকভাবে কেটে নিন।কলমে কয়েকটি পাতা রাখতে পারেন, তবে খুব বেশি পাতা রাখবেন না।
  • মূলদানে কাটা: মূলদানে যেখানে কলম জোড়া হবে সেখানে একই আকারে কাটা দিন।কলম জোড়া: কলম এবং মূলদানের কাটা অংশগুলোকে একে অপরের সাথে মিলিয়ে দৃঢ়ভাবে বাঁধুন।রক্ষা: কলম জোড়া দেওয়া জায়গাটি পলিথিন বা টেপ দিয়ে ভালো করে মুড়িয়ে দিন। এতে করে কলমটি শুকিয়ে যাবে না।
  • পরিচর্যা: কলম জোড়া দেওয়ার পর নিয়মিত পানি দিন। কয়েক সপ্তাহ পরে বাঁধন খুলে ফেলুন। যদি কলম সফল হয়, তবে মূলদানের অন্যান্য ডাল কেটে ফেলুন।

কলম করার উপযুক্ত সময়সাধারণত শীতকালের শেষ বা বসন্তের শুরুতে কলম করা হয়।এই সময় গাছের রস প্রবাহ কম থাকে এবং কলম সহজে জোড়া লাগে।

সতর্কতা: কলম করার সময় সবসময় পরিষ্কার ছুরি ব্যবহার করুন। কলম এবং মূলদান দুটিই সুস্থ হতে হবে। কলম জোড়া দেওয়ার পর যত্ন সহকারে পরিচর্যা করুন।

কলম করার এই পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি নিজেই বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ এবং ফুলের গাছ তৈরি করতে পারবেন।

চারা গাছের পরিচর্যা

চারা গাছের পরিচর্যা শুধু গাছ লাগানো নয়, এটি একটি দায়িত্ব, একটি ভালবাসা। সঠিক পরিচর্যায় একটি ছোট্ট চারা থেকে বড় বৃক্ষের জন্ম হয়, যা আমাদের পরিবেশকে সুন্দর করে তোলে এবং প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

চারা রোপণের আগে জানা জরুরি

মাটি: কোন গাছের জন্য কোন ধরনের মাটি উপযোগী, তা আগেই জেনে নিন।
পানি: গাছের প্রজাতি অনুযায়ী পানির পরিমাণ নির্ধারণ করুন।
সার: নিয়মিত সার দেওয়া গাছের বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত জরুরি।
সূর্যের আলো: কোন গাছ কতটা সূর্যের আলো পছন্দ করে, তা জানা জরুরি।
আগাছা: আগাছা গাছের পুষ্টি শোষণ করে, তাই নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করুন।

চারা রোপণের পর পরিচর্যা

  • পানি: নিয়মিত পানি দিন, বিশেষ করে গরমের মৌসুমে।
  • সার: নির্দিষ্ট সময় পর পর সার দিন।
  • আগাছা: নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করুন।
  • রোগবালাই: রোগ বা পোকা আক্রান্ত হলে উপযুক্ত ওষুধ ব্যবহার করুন।
  • ছাঁটাই: অতিরিক্ত ডালপালা কেটে ফেলুন।

বিভিন্ন ঋতুতে পরিচর্যা

গ্রীষ্ম: গরমে বেশি পানি দিন এবং ছায়া দিন।
শীত: শীতে পানির পরিমাণ কমিয়ে দিন এবং গোড়ায় পাতা দিয়ে ঢেকে রাখুন।
বর্ষা: বর্ষায় অতিরিক্ত পানি জমতে দেবেন না।

কেন চারা গাছের পরিচর্যা জরুরি?

পরিবেশ সুরক্ষা: গাছ অক্সিজেন দেয় এবং বায়ুদূষণ কমায়।
জীববৈচিত্র্য: গাছ বিভিন্ন প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে।
মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি: গাছের শিকড় মাটির গঠন উন্নত করে।
সৌন্দর্য বৃদ্ধি: গাছ পরিবেশকে সুন্দর করে তোলে।

মনে রাখবেন: প্রতিটি গাছের নিজস্ব চাহিদা থাকে। ধৈর্য ধরে গাছের যত্ন নিন।

আপনার হাতে একটি চারা, আপনার হাতে একটি স্বপ্ন। এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে আজই শুরু করুন চারা গাছের পরিচর্যা।

কত ফুট দূরত্বে গাছ লাগাতে হয়?

গাছের দূরত্ব গাছের প্রজাতি, জাতি, জমির আকার এবং চাষের উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে।

  1. সাধারণত ফলের গাছগুলো বড় হয়। তাই এদের মধ্যে ১০-১৫ ফুট দূরত্ব রাখা উচিত।
  2. সবজি গাছগুলো সাধারণত ছোট হয়। তাই এদের মধ্যে ২-৩ ফুট দূরত্ব রাখা যায়।
  3. শোভাবর্ধনকারী গাছের ক্ষেত্রে গাছের আকার এবং বাগানের ডিজাইনের উপর নির্ভর করে দূরত্ব নির্ধারণ করা হয়।

কেন দূরত্ব বজায় রাখা জরূরি?

যাতে প্রতিটি গাছ পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পায়। গাছের মধ্যে বাতাস চলাচল করে এবং রোগবালাই হওয়ার সম্ভাবনা কমে। গাছের শিকড় পর্যাপ্ত জায়গা পায় এবং বৃদ্ধি পায়। গাছের শিকড় পরস্পরের সাথে পানির জন্য প্রতিযোগিতা না করে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

জমি যদি খুব শুষ্ক হয়, তাহলে গাছের মধ্যে দূরত্ব একটু কম রাখা যেতে পারে। পানির সুবিধা ভালো  তাহলে গাছের মধ্যে দূরত্ব একটু বেশি রাখা যেতে পারে। কিছু গাছের শিকড় অন্য গাছের চেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ে। তাই এই ধরনের গাছের মধ্যে দূরত্ব একটু বেশি রাখা উচিত।

বিভিন্ন ফলগাছে সারের মাত্রা

ফলগাছে সারের মাত্রা নির্ধারণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সঠিক পরিমাণ ও ধরনের সার প্রয়োগ গাছের স্বাস্থ্য, ফলন এবং গুণগত মান উন্নত করতে সাহায্য করে। তবে, কোন ফলগাছের জন্য কত পরিমাণ সার দিতে হবে তা নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের উপর, যেমন:

গাছের প্রজাতি: প্রতিটি ফলগাছের পুষ্টির চাহিদা ভিন্ন।
মাটির ধরন: মাটির উর্বরতা, পানি ধরে রাখার ক্ষমতা ইত্যাদি সারের প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করে।আবহাওয়া: তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত ইত্যাদি সারের ক্ষয় এবং শোষণকে প্রভাবিত করে।
গাছের বয়স: তরুণ গাছের তুলনায় পরিপক্ক গাছের সারের চাহিদা বেশি।

সাধারণভাবে, ফলগাছে প্রয়োজনীয় মূল পুষ্টি উপাদানগুলো হল: 
নাইট্রোজেন (N): গাছের পাতা ও ডালের বৃদ্ধি এবং ফুল ও ফল ধরার জন্য প্রয়োজনীয়। 
ফসফরাস (P): শিকড়ের বৃদ্ধি, ফুল ফোটানো এবং ফলের গুণগত মান উন্নত করতে সাহায্য করে।পটাশিয়াম (K): গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ফলের স্বাদ ও আকার বাড়ায়।

ধরুন, আপনার আম গাছ আছে। সাধারণত এক বছরে প্রতি গাছের জন্য নিম্নলিখিত পরিমাণ সার প্রয়োগ করা হয়:গোবর সার: 15-20 কেজিইউরিয়া: 500-750 গ্রামটিএসপি: 250-375 গ্রামএমওপি: 250-375 গ্রাম

আপনি যদি মিশ্র সার ব্যবহার করেন, তাহলে প্রতি গাছে প্রায় 1-1.5 কেজি মিশ্র সার প্রয়োগ করতে পারেন।

অন্যান্য ফলগাছের ক্ষেত্রে সারের পরিমাণ কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ:
লেবু: লেবু গাছে নাইট্রোজেনের প্রয়োজন বেশি।
আঙুর: আঙুর গাছে পটাশিয়ামের প্রয়োজন বেশি।
আমড়া: আমড়া গাছে ফসফরাসের প্রয়োজন বেশি।

সার প্রয়োগের পদ্ধতি:

গর্ত করে সার দেওয়া: গাছের চারপাশে গর্ত করে সার দেওয়া সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। 
পানি দিয়ে সার গুলে দেওয়া: দ্রবণীয় সারকে পানিতে গুলে গাছের গোড়ায় দিতে হবে।
পাতায় স্প্রে করা: কিছু ধরনের সার পাতায় স্প্রে করে দেওয়া হয়।

মনে রাখবেন: সার প্রয়োগের আগে মাটির পরীক্ষা করা উচিত। সারের অতিরিক্ত ব্যবহার গাছের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বৃষ্টির সময় সার প্রয়োগ না করা উচিত। জৈব সারের পাশাপাশি রাসায়নিক সারও ব্যবহার করা যেতে পারে।

সারের বিকল্প: জৈব সার: গোবর সার, কম্পোস্ট ইত্যাদি জৈব সার মাটির উর্বরতা বাড়াতে সাহায্য করে।গ্রিন মান্যুর: হরিণ চা, আজোলা ইত্যাদি গ্রিন মান্যুর মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।

টবে চারা গাছ লাগানোর পদ্ধতি:

টবে চারা গাছ লাগানো এখন অনেকেরই পছন্দের একটি কাজ। ছাদ বা বারান্দায় সীমিত জায়গায়ও আপনি নিজের পছন্দের ফুল, ফল বা সবজি চাষ করতে পারেন।

টবে চারা লাগানোর জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র: 

টব: গাছের প্রজাতি ও আকার অনুযায়ী টবের আকার নির্বাচন করুন। নিচে ছিদ্র থাকা জরুরি।
মাটি: ভালোমানের বাগানের মাটি, পাতা পচা সার এবং বালি মিশিয়ে মাটি প্রস্তুত করুন।
সার: গাছের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সার।
বীজ বা চারা: আপনি যে গাছটি লাগাতে চান তার বীজ বা চারা।
পানি: স্প্রে বা পানির ক্যান।খুঁটি: বড় গাছের জন্য সমর্থন দেওয়ার জন্য।

টবে চারা লাগানোর পদ্ধতি:

টব প্রস্তুত: টবের নিচে ছিদ্র থাকা নিশ্চিত করুন। ছিদ্র দিয়ে পানি বের হয়ে যাবে।
মাটি ভর্তি: টবের নিচে কিছু ছোট পাথর বা ইটের টুকরা দিয়ে দিন। এরপর মাটি ভর্তি করে দিন।
গর্ত করুন: মাটিতে একটি ছোট গর্ত করুন। গর্তটি চারার আকারের হওয়া উচিত।
চারা রোপণ: চারাটি সাবধানে গর্তে রাখুন। চারার গোড়া মাটির সমান হওয়া উচিত।
মাটি চাপা: চারার চারপাশে মাটি ভালো করে চাপা দিন।
পানি দিন: রোপণের পর ভালো করে পানি দিন।
সুর্যের আলো: টবটি সূর্যের আলো পায় এমন জায়গায় রাখুন।
সার দেওয়া: নির্দিষ্ট সময় পর পর সার দিন।

টবে চারা গাছের যত্ন:

  • মাটি শুকিয়ে গেলে পানি দিন।
  • নির্দিষ্ট সময় পর পর সার দিন।
  • সূর্যের আলো পায় এমন জায়গায় রাখুন।
  • আগাছা পরিষ্কার করুন।
  • রোগবালাই দেখা দিলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন।

টবে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানো যায়: 

ফুল: গোলাপ, জবা, টগর, মাল্টি ইত্যাদি।
সবজি: টমেটো, শিম, ঢাকা, লেটুস ইত্যাদি।
জাতি ফল: লেবু, কমলা, আম ইত্যাদি।জড়িবুটি: তুলসী, ধনে, পুদিনা ইত্যাদি।

টবে চারা লাগানোর সুবিধা:

সীমিত জায়গায় চাষাবাদ করা যায়। বাড়ির সৌন্দর্য বাড়ায়। পরিবেশবান্ধব। নিজের পছন্দের ফল ও সবজি চাষ করা যায়।

মনে রাখবেন :বিভিন্ন গাছের জন্য বিভিন্ন ধরনের যত্ন প্রয়োজন। গাছের প্রজাতি ও আকার অনুযায়ী টবের আকার নির্বাচন করুন। নিয়মিত গাছের যত্ন নিন।


পলিব্যাগের চারা উৎপাদন


পলিব্যাগে চারা উৎপাদন হলো কৃষিজমি ব্যবহার করে চারা উৎপাদনের একটি আধুনিক পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে কম জায়গায় বেশি সংখ্যক চারা উৎপাদন করা যায় এবং চারাগুলো সহজে পরিবহনযোগ্য হয়।

পলিব্যাগের চারা উৎপাদনের সুবিধা: 

জমি বাঁচায়: খোলা মাঠের তুলনায় কম জায়গায় বেশি চারা উৎপাদন করা যায়।
সহজ পরিবহন: পলিব্যাগের চারা সহজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেওয়া যায়।
রোগবালাই দমন সহজ: পলিব্যাগে চারা থাকায় রোগবালাই দমন সহজ হয়।
মূলের বৃদ্ধি ভালো হয়: পলিব্যাগে মূল ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়।
চারা সুস্থ ও সবল হয়: পলিব্যাগে উৎপাদিত চারা সাধারণত সুস্থ ও সবল হয়।

পলিব্যাগের চারা উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র

পলিব্যাগ: বিভিন্ন আকারের পলিব্যাগ পাওয়া যায়। গাছের প্রজাতি অনুযায়ী পলিব্যাগের আকার নির্বাচন করতে হবে।
মাটি: ভালোমানের বাগানের মাটি, পাতা পচা সার এবং বালি মিশিয়ে মাটি প্রস্তুত করতে হবে।
বীজ: আপনি যে গাছের চারা তৈরি করতে চান তার বীজ।
সার: গাছের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সার।
পানি: স্প্রে বা পানির ক্যান।

পলিব্যাগে চারা উৎপাদনের পদ্ধতি:

পলিব্যাগ প্রস্তুত: পলিব্যাগের নিচে ছিদ্র থাকা নিশ্চিত করুন। ছিদ্র দিয়ে পানি বের হয়ে যাবে।
মাটি ভর্তি: পলিব্যাগে মাটি ভর্তি করে দিন।
বীজ বপন: মাটিতে একটি ছোট গর্ত করে বীজ রাখুন এবং মাটি দিয়ে ঢেকে দিন।
পানি দিন: বীজ বপনের পর ভালো করে পানি দিন।
সুর্যের আলো: পলিব্যাগগুলো সূর্যের আলো পায় এমন জায়গায় রাখুন।
সার দেওয়া: নির্দিষ্ট সময় পর পর সার দিন।
আগাছা পরিষ্কার: আগাছা পরিষ্কার করুন।
রোগবালাই দমন: রোগবালাই দেখা দিলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন।

পলিব্যাগের চারা গাছের যত্ন:

পানি: মাটি শুকিয়ে গেলে পানি দিন।
সার: নির্দিষ্ট সময় পর পর সার দিন।
আলো: সূর্যের আলো পায় এমন জায়গায় রাখুন।
আগাছা: আগাছা পরিষ্কার করুন।
রোগবালাই: রোগবালাই দেখা দিলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন।

বিভিন্ন ফসলের জন্য পলিব্যাগের আকার:

বিভিন্ন ফসলের জন্য বিভিন্ন আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ধান, গম, শাকসবজি ইত্যাদির জন্য আলাদা আলাদা আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করা হয়।

পলিব্যাগে চারা উৎপাদনের সতর্কতা: পলিব্যাগের নিচে ছিদ্র থাকা নিশ্চিত করুন। মাটি ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। বীজ বপনের সময় সঠিক দূরত্ব বজায় রাখুন। নিয়মিত পানি দিন। আগাছা পরিষ্কার রাখুন। রোগবালাই দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।

অন্যান্য পাত্রে চারা উৎপাদন: পলিব্যাগের বিকল্প

পলিব্যাগ ছাড়াও অন্যান্য অনেক ধরনের পাত্রে চারা উৎপাদন করা যায়। এগুলোর মধ্যে কিছু পাত্র পরিবেশবান্ধব এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্যও। আসুন জেনে নিই এই পাত্রগুলো সম্পর্কে:

পলিব্যাগের বিকল্প পাত্র

পেপার পট: কাগজ দিয়ে তৈরি এই পাত্রগুলো পরিবেশবান্ধব। মাটিতে পচে যায় এবং গাছের পুষ্টির জন্য সহায়ক হয়।
কোকো পিট ব্লক: নারকেলের খোসা থেকে তৈরি এই ব্লকগুলো জল ধরে রাখে এবং বীজ অঙ্কুরণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে।
পিট পট: পিট মস দিয়ে তৈরি এই পাত্রগুলোও পরিবেশবান্ধব এবং বীজ অঙ্কুরণের জন্য উপযুক্ত।ইঁটের টুকরা: পুরানো ইঁটের টুকরা পরিষ্কার করে ব্যবহার করা যায়।
প্লাস্টিকের কাপ: পুরানো প্লাস্টিকের কাপ পরিষ্কার করে ব্যবহার করা যায়।ডাবের খোসা: ডাবের খোসা কেটে ছোট ছোট পাত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
দইয়ের কাপ: খালি দইয়ের কাপ পরিষ্কার করে ব্যবহার করা যায়।
কলার খোসা: কলা খোসার ভিতরে বীজ বপন করে চারা উৎপাদন করা যায়।

অন্যান্য পাত্রে চারা উৎপাদনের সুবিধা

পরিবেশবান্ধব: অনেক পাত্রই পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং মাটিতে পচে যায়।
সস্তা: অনেক পাত্রই বাড়িতে পাওয়া যায় বা খুব কম খরচে কেনা যায়।
সহজলভ্য: এই পাত্রগুলো সাধারণত সহজেই পাওয়া যায়।

অন্যান্য পাত্রে চারা উৎপাদনের পদ্ধতি

পাত্র প্রস্তুত: পাত্রটি পরিষ্কার করে নিচে ছিদ্র করে নিন।
মাটি ভর্তি: পাত্রটি মাটি দিয়ে ভরে দিন।
বীজ বপন: মাটিতে একটি ছোট গর্ত করে বীজ রাখুন এবং মাটি দিয়ে ঢেকে দিন।
পানি দিন: বীজ বপনের পর ভালো করে পানি দিন।
সুর্যের আলো: পাত্রগুলো সূর্যের আলো পায় এমন জায়গায় রাখুন।
সার দেওয়া: নির্দিষ্ট সময় পর পর সার দিন।
আগাছা পরিষ্কার: আগাছা পরিষ্কার করুন।
রোগবালাই দমন: রোগবালাই দেখা দিলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন।

মনে রাখবেন: বিভিন্ন গাছের জন্য বিভিন্ন আকারের পাত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। পাত্রটির নিচে ছিদ্র থাকা জরুরি। মাটি ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। বীজ বপনের সময় সঠিক দূরত্ব বজায় রাখুন। নিয়মিত পানি দিন। আগাছা পরিষ্কার রাখুন। রোগবালাই দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।


উপসংহার:

পলিব্যাগ ছাড়াও অন্যান্য অনেক ধরনের পাত্রে চারা উৎপাদন করা যায়। এই পদ্ধতিটি পরিবেশবান্ধব এবং সস্তা। আপনি আপনার সুবিধামত যে কোনো পাত্র ব্যবহার করতে পারেন।

গাছ লাগান এবং পরিবেশকে সুন্দর করুন!
Previous Post Next Post